যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা

Thursday 8 October 2020

সম্পাদকীয়--

 সম্পাদকীয়--

স্বরধ্বনি শারদীয় সংখ্যা প্রকাশ হতে চলল। এবার শরতের আনন্দ তেমন আর মন থেকে খুঁজে পাচ্ছি কি? জীবন বলতে গেলে মহামারী গ্রস্ত। গৃহবন্দি জীবনের এই দীর্ঘ স্থিরতা তথা অস্থিরতার মাঝে আমরাও যেন কোথাও আটকে আছি ! যেন এক পরাধীন জীবন যাপন চলছে আমাদের। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরের বাইরে পা রাখতে হচ্ছে--সব সময় মুখে বাঁধতে হচ্ছে এক কলুর বলদ ঠুলি। অচ্ছুৎ ভাবনায় দূরে দূরে থাকি, সবারই দেহে যেন ছোঁয়াচে রোগ লেগে আছে ! 

আর যৌবনকালটাও কতটা বাধিত হয়ে

পড়েছে--প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম করাও যেন বারণ। লুকোচুরি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা সে তো আজ বাতিলের লিস্টে রাখা আছে। একটা চুম্বনও যেন আজ অন্তরীক্ষে ঝুলে রয়েছে ! হতাশ আজ সব দিক থেকে আমরা। শারদীয় মেজাজটাও আমাদের অনেক খানি বিগড়ে গেছে। প্রকৃতি কিন্তু ঠিকই সেজে আছে আগমনীর অপেক্ষায়। কেবল আমাদের উৎসুকতার গতি তেমন ভাবে ধরা পড়ছে না। তবু আমাদের বাঁচতে হবে, আর সে জন্য মনের খোরাকটাও তো চাই, মার আগমনীর বর্ষবরণ প্রতীক্ষা তো একেবারে শূন্যতায় ফিরিয়ে দিতে পারি না। তোড়জোড় না হলেও চলছে আয়োজন, শত বাধা বিঘ্ন ঠেলে হলেও বাঙালি তার আনন্দ উৎসবে যোগ না দিয়ে পারে না। 

বর্তমানে ছাপা পত্রিকার খুবই অভাব--কারণ ওই কোরনার করুণায় আজ নামীদামী পত্রিকাগুলিও তাদের অনলাইন ভার্সন বের করে নিয়েছে। ই-পত্রিকার লোকপ্রিয়তা এখন অনেকটাই ওপরে, বর্তমানে এই

যান্ত্রিক অন্তর্জাল ব্যবস্থাকে অস্বীকার করার অবস্থায় আমরা কেউ নেই। স্বরধ্বনির বর্তমান সংখ্যা তো আমরা অনেক কবিদের সাড়া পেয়েছি। তার মধ্যে জানা-মানা অনেক কবিরা আছেন-- তৈমুর খান, কৌস্তব  দে সরকার, কাজল সেন, তপন সাহা, তীর্থঙ্কর মৈত্র, তুষ্টি ভট্টাচার্য, জারা সোমা, দ্বৈতা হাজরা, লুতফুল বারি পান্না, এশরার লতিফ,  মাথুর দাস, পশুপতি ভদ্র, নির্মাল্য বিশ্বাস,গৌরী মৈত্র, সীমা ব্যানার্জী রায়, হিল্লোল রায়, শ্যামাপ্রসাদ সরকার, বদরুদ্দোজা শেখু, তুলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রাণী রাই প্রমুখ। এ ছাড়া আছেন, নবীন-প্রবীণ অনেক লেখক-কবি যাদের প্রতি পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।  

কোরনা নিপাত যাক, সুস্থ জীবন ফিরে আসুক, আগামীর উৎসব পূজা-পার্বণে আবার যেন আমরা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এগিয়ে আসতে পারি। সবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কামনা করে  এবারের মত এই সম্পাদকীয় কথা শেষ করলাম--নিবেদন-ইতি-- 

সম্পাদক--তাপসকিরণ রায় 

সহ-সম্পাদ--শমিত কর্মকার।


Wednesday 7 October 2020

মাথুর দাস

 

বোধ

মাথুর দাস

 

প্রকাশিত কথাগুলি বড়ই জটিল

অপ্রকাশ সূত্র খোঁজো নিজস্ব মননে,

সময় জেনেছে শুধু বিষয় কুটিল

অসারতা জেগে ওঠে  সীমিত খননে ।

 

প্রত্যক্ষে দেখি যা   তা দৃষ্টির বিভ্রম

সত্যটুকু দেখা যাক  দৃশ্য-অগোচরে,

বোধের সমক্ষে ঋণী বোধ অনুপম

ক্ষুদ্র  মন  প্রকটিত   রুদ্র  পরিসরে ।

 

এখন  এমনই  ধারা   বহে  নিরন্তর

স্রোতের পলল স্তরে  গভীরতা কমে,

'সে কহে বিস্তর মিথ্যা যে কহে বিস্তর'

কথার হেঁয়ালি ভাসে অধুনা মাধ্যমে ।


ছবিকবিতায়--তুলিকা বন্দোপাধ্যায়--

 ছবিকবিতায়--তুলিকা বন্দোপাধ্যায়--


 

সোনালী মুখার্জী


তোমার জন্যে


সোনালী মুখার্জী


তোমার জন্যে একটা কবিতা লিখেছিলাম,

তবে তা খাতার পাতায় নয়,

হৃদয়ের মাঝে স্মৃতি ভরা কলমে, 

অনেক ভেবেও তোমায় শোনানো হয়নি,

তবে সে ভাষা অনেক যত্ন করে

রেখে ছিলাম আমার দু-নয়ন  ভরে,

যা তুমি পড়ে নিয়েছিলে,

আমার অগোচরে।


ইন্দ্রাণী ব্যানার্জীর কবিতা--

বর্ষাভিসার


ইন্দ্রাণী ব্যানার্জী


এই বাঁধলাম নুপূর

চোখে দিলাম কাজল

আজ আর নয়

অলক্তরাগ।


বাইরে রিমিঝিমি

বক্ষে দ্রিমিদ্রিমি

হৃদয়গহীনে

সংকেত ডাক।


ভরা নদী

ভরা যৌবন।

কেতকী কদমে

সাজে উপবন।


অধীর অধরা

ব্যাকুল হিয়া

আজ শুধু অভিসার।


আলোপাখি


আমার মনখারাপের বারান্দায়

রোজ একটা পাখি আসে।

অন্ধকার মনের হদিশ খুঁজে

ঠিক হাজিরা দেয়।


আমি ওকে নাম দিয়েছি আলোপাখি।

কী তীব্র ওর ছটা।

আমাকে গান শোনায়।


গভীর প্রত্যয়ে বাসা বাঁধে

আঙুল তুলে শাসন করে

আবার কোথা থেকে

মুখে করে আনে

খুদকুঁড়ো।

আমার মুখে গুঁজে দিয়ে

কিচ্ কিচ্ করে ডাকে।


আমি যত বলি

যা পাখি যা।

কিছুতেই আমাকে ছাড়ে না।

ভাবটা যেন এই

আমি একটা হাঁদারাম।


আমার গভীর প্রত্যয়ে

রোজ আলোপাখি আসে।


সহজ জীবনের গল্প


গল্পটা লেখার ইচ্ছেছিল

সহজ জীবনের গল্প।

যেখানে ক্লান্ত শরীর

শীতল দেহে পাবে ওম।


অপূর্ব স্বপ্নাবেশে

ভেসে থাকবে

গল্পের চরিত্রগুলো 


হায়!গল্পটা লেখা গেল না।

আকাশে শুধুই এখন

চিল আর শকুন।


কী করে ওরা 

গল্পের চরিত্র হল?

আমি তো

শালিক,চড়াই আর

কোকিলের সহজ গল্প

লিখতে চাইলাম।


এমনি করেই

গল্প লেখা হয় না।

পাঠক সমাজ

ক্ষমা করুন।

ওরা তীব্র রূপী

সুযোগ পেলেই ছিনিয়ে নেয়

জীবনের সহজ গল্পগুলো।


আক্ষেপটাই সার

সহজ জীবন

জটিলতর হচ্ছে।


সহজ জীবনের গল্প

এখন শুধুই মরীচিকা।

 

আলমগীর সরকার লিটনের কবিতা--

আলমগীর সরকার লিটনের কবিতা--


শরতের মুখরোচক


=================================

শরত হেঁটে গিয়েছিল ঠিক পাঁজরের উপর দিয়ে-

সমস্ত কাশফুল ঝরেছিল অথৈ জলতরঙ্গের উপর;

অপেক্ষার প্রহরগুলো নিঃঘুম তবু শরতের অণু দেহ

দৃষ্টিপাত করে ঐ নীল সাদাকাশের নিশিপানে চাঁদ।


শুধু কল্লোলে ফুটল শরত শিশির সিক্ত ঘাস ফুল

নরম পদাঙ্ক স্পর্শ করে না ঠিক যেনো প্রণয়েরের

দীর্ঘশ্বাস অথচ ঘুমটা পরে মেলেছে সরিষা ফুলের 

গন্ধ উড়ানো রাজপথ- অতঃপর এভাবেই সুনিশ্চিত-


শরত একদিন আসবে বুঝি- ঐ গোধূলি মেঘের উপর-

কিংবা অষ্টকাদি মুখরোচক শরতের শূন্য পালঙ্কে ভর।


সবই আছে 


===============================

দেশের সবই আছে নেই শুধু ঘণ প্রেম! 

কিছু মানুষ ভালবাসা বুঝাচ্ছে কিন্তু বিড়ালটা 

মানচ্ছে না ইলিশটা তেলে ভাসচ্ছে ঠিকই  

কিন্তু প্রেম হচ্ছে না গাঢ়- তবুও মিছিলে  

শ্লোগানে রেডিও, টিভি চ্যানেল, বাতাস  

প্রেমিকে সবই আছে; আমি কিছুই খোঁজে পাচ্ছি না! 

আমাকে অসুখ বলচ্ছে আমি কি অসুখ? 

কোথায় আম কাঁঠাল বুঝতেছে না কেনো 

অতঃপর বলচ্ছে তবুও সবই আছে- সবই আছে। 

 

অসুখ


=========================

তোমার বোতল ভরা হাসি দেখে পিলে

চমকে উঠে! ভাসতে যাই নদে জলে।

অথচ একদিনও চায়লে না বোতলের

কর্ক খুলে হাঁটতে- একে বারে মনে হয় না

 ক্লান্তবোধ যদি না হয় ভাল্বের অসুখ-

নিশ্বাসটা ভারি! ভাল্ব সংঙ্করণ নাকি! মৃত্যুর

কাছাকাছি কিংবা খরজটা অনেক বেশি,


শুধু জানতে চেয়েও না দেহ কুন্ডে অসুখ-

তার চেয়ে বরং ডুবেই যাই! তোমার নৈঃশব্দে

বোতল বন্দি ডুবোশহরে; লজ্জার হাটুজল হয়েছে

বালুচর শুধু অজস্র প্রলাপের স্মৃতি খল পরেছে

শ্যাম্পেনের ঝরা কষ্ট! গরম তেলে ভাজা ফুরিয়ে

যায় তালপাতার সুখ। অতঃপর জানতে চেয়েও না

যদি বোতল ভরা হাসি মুখে উচ্ছলে উঠে অসুখ।

 

তমা কর্মকার

গদ্যকবিতা-স্বার্থপর

তমা কর্মকার


মনটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে একদিন গড়ে তুলে ছিলাম একটি ইমারত

তুমি বন্ধু বেশে প্রবেশ করলে সেই ইমারতে|

তোমার মনের ক্ষিদে মেটাতে ধীরে ধীরে সেই ইমারতের দখল নিলে,

চরিতার্থ করলে তুমি তোমার কুটিল মনের বাসনা

পূর্ণ হলো তোমার মনের লালসার বিকৃত মনের ক্ষিদে|

এবার তোমার অন্য মনের ইমারত চাই| তাই আমার মনের ভালোবাসার ইমারতকে তুমি,

তোমার মনের ঈর্ষা কাঁটা দিয়ে চিরে ফালা ফালা করে দিলে|

আমি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম, না তুমি আমার সে ব্যথা দেখতে পেলেনা,

কি করে দেখবে?

তোমার চোখে যে এখন অন্য মনের রঙিন স্বপ্ন

অন্য মনের ইমারতে প্রবেশ পথের অন্নেষণে তুমি ব্যস্ত|

আজ আমার তোমাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে তুমি স্বার্থপর

হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি আস্ত একটা মুখোশ ধারী স্বার্থপর|

কিন্তু কিকরে সবাইকে তোমার স্বার্থপরতার,বর্বরতার,

আসল কদর্য রূপটা দেখাই বলো?

আজ তোমার স্বার্থপরতার বর্বরতার আসল কদর্য রূপটা সবাইকে দেখালে? তোমার সুন্দর মুখের আড়ালের ওই ভয়ঙ্কর কদর্য রূপটা দেখলে যে,

মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালোবাসতে,এমনকি বন্ধুত্ব শব্দটাকে ভয় পাবে|

প্রতিটা মুহূর্তে মানুষ মানুষকে দেখবে সন্দিহানের চোখে

কেউ আমার মতো মনের ইমারতের দ্বার আর রাখবেনা খোলা|

তোমার মতো একজন বন্ধুবেশী সুযোগ সন্ধানী স্বার্থপর

করতে পারবেনা আর কারো শরীর মন নিয়ে খেলা|

সব জেনেও তবুও আমি মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারবোনা

তোমার সার্থপরতা বর্বরতার কথা|

কিকরে একজন মানুষ হয়ে বলো সমস্ত মানুষ জাতির ক্ষতি করি?

কারণ সবাইতো তোমার মতো স্বার্থপর বর্বর কদর্য বিকৃত মনের নয়

তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে যে নিরীহ মানুষ গুলোকেও শাস্তি দেওয়া হবে|

তবুও অপরাধীকে ছেড়ে দিতে নেই তাই তোমাকেও আমি ছেড়ে দিলামনা

তোমাকে শাস্তি দেবার ভারটা আমি তুলে দিলাম একক পরম পিতা ঈশ্বরের হাতে|

তিনি নিশ্চয়ই তার বানানো মানব কূল রক্ষার্থে নেমে আসবেন ধরাধামে

আর তোমার মতো স্বার্থপর নরাধমের সংহার করে বিনাশ করবেন পাপী কূল| এই ধরণীতল থেকে হবে পাপের বিনাশ,

শুদ্ধতার জলে কদর্য কালিমা ধুয়ে মুছে ধরণীতল হবে আবার নির্মল|

মানুষেরা প্রাণ ভরে নেবে বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস|